মন ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকে, আর মন খারাপ থাকলে শরীর খারাপ থাকে। মানুষের জীবন সুখ দুঃখ নিয়েই গঠিত কখনো মানুষ সুখের ছোঁয়ায় ভেসে যায় আবার কখনো দুঃখে কোন কুল কিনারা খুঁজে পায় না।
মানুষের মন যেকোনো কারণে খারাপ হতে পারে হোক সেটা অনেক বড় কোন কারণ বা ছোট কারণ। পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন বিষয় হলো মানুষের মন বোঝা। তাই কখনকার কি জন্য মন খারাপ হলো সেটা বোঝা বেশ মুশকিল।
মানুষের দুঃখে মন খারাপ হবে স্বাভাবিক তবে কখনো কখনো অকারণে মন খারাপ হয়ে যায় এই বিষয়টি ইসলামে কোন মতেই কাম্য নয়। মন খারাপ হওয়ার জন্য অবশ্যই নির্দিষ্ট কোনো কারণ থাকতে হবে। তবে আপনার যদি মন খারাপ হয়ে থাকে কিভাবে ইসলামিক উপায়ে মনকে ভালো করবেন সেই বিষয়ে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত দেওয়া আছে।
মন ভালো করার ইসলামিক উপায়
মানুষের মন যে কোনো কারণে খারাপ হতে পারে। তবে এখানে দেখার বিষয় কি জন্য মানুষের মন অতি দ্রুত খারাপ হয়, হতে পারে সেটা কোন কিছু না পাওয়ার জন্য বা কোন পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য। বা আপন কোন মানুষের কাছ থেকে কষ্ট পাওয়ার মতো কোনো কারণ। তাই আপনি যদি আপনার মনকে ইসলামিক উপায়ে ভালো করতে চান তাহলে নিচে দেওয়া উপায় গুলো অবলম্বন করতে পারেন আশা করি আপনার মন ভাল হয়ে যাবে।
আল্লাহর উপর ভরসা রাখা
বিপদের সময়ে সবচেয়ে বেশি জরুরী সেটা হল আল্লাহর উপর ভরসা রাখা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বলে দিয়েছেন ধৈর্যের ফল অবশ্যই সুস্বাদু। তাই জীবনে কখনো কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত হলে কখনো ভেঙে পড়বেন না বরঞ্চ আল্লাহর উপর ছেড়ে দেবেন এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন।
আল্লাহ আপনাকে যেমন কষ্টে পতিত করেছেন তেমনি আল্লাহ আপনাকে কষ্ট থেকে পরিত্রাণ দেবেন। বিপদে বা কোন কষ্টের সময় আল্লাহর উপর ধৈর্য ধারণ করলে আল্লাহ অবশ্যই আপনার ধৈর্যের ফল দেবেন কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেন বান্দা ধৈর্য ধরে কোন কিছু চাইলে আল্লাহ তা’আলা তার চাওয়া পূরণ করেন। তবে সেটা অবশ্যই নেক কাজের ফুরসাতে হতে হবে।
৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া
মন ভালো রাখতে হলে অবশ্যই নামাজ পড়া আবশ্যক। নামাজ যেমন মনকে ভালো রাখে তেমনি শরীরকে অনেক সুস্থ রাখে। তাই মন ভালো রাখার জন্য নামাজের কোন বিকল্প নেই। একজন ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে সেই ব্যক্তির মন সবসময় আল্লাহর ধ্যানে থাকে। আর সেই ব্যক্তির উপর আল্লাহর দয়া বর্ষিত হয়। নামাজ মানুষকে যেমন পাপ থেকে মুক্তি দেয় তেমনি কষ্ট থেকেও মুক্তি দেয়, তাই প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করুন।
ভাগ্য বিশ্বাস করা
আমাদের মধ্য বেশিরভাগ মানুষই এখন ভাগ্য করে বিশ্বাস করতে চায় না। যখন আমাদের জীবনে এমন কোন কিছু ঘটে যা মোটেও কাম্য নয় তখন আমরা আমাদের ভাগ্য বিশ্বাস করতে চায় না বরং আল্লাহকে এর জন্য দোষারোপ করি।
আমাদের জীবনের যা কিছু হোক না কেন সেটা আমাদের কর্মফল এবং দোয়ার বিনিময়ে আমরা তা পেয়ে থাকি। আল্লাহ তাআলা কিছু বিষয় ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন যেমন জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ে। দুনিয়াতে যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন পর্যন্ত কিছু বিষয়ে ভাগ্যের উপর নির্ভর করবে এবং বাকিটা কর্মফলের উপরে ফল পাবে।
অনেক ব্যক্তি আছেন ভাগ্য বিশ্বাস না করে অন্য কিছু বিশ্বাস করে আবার অনেকেই যাদু-টোনা বিশ্বাস করে আল্লাহর প্রতি শিরক সৃষ্টি করে। ভাগ্য বিশ্বাস করা একটি ঈমানের অঙ্গ তাই আমাদের উচিত এই বিষয়ে কোন ধরনের সন্দেহ পোষণ না করা।
সৎসঙ্গ লাভ করা
বলা হয়ে থাকে সৎ সঙ্গে স্বর্গে বাস আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। আপনি যদি একজন সৎ প্রতিভাবান বন্ধু পান তাহলে সেই বন্ধু আপনার মন ভালো করতে সাহায্য করবে। আর আপনি যদি একটি অসৎ বন্ধু পান তাহলে সে আপনার দুর্বলতাকে সুযোগ লাগে আরও কষ্টে পতিত করবে।
জীবনে বন্ধু হিসেবে নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই ধার্মিক বন্ধু নির্বাচন করতে হবে। আজ রাতে ও পরকালে দুই জায়গায় আপনি লাভবান হতে পারবেন। সৎ বন্ধু আপনার পাশে থাকবে এবং আপনার কষ্টে ব্যতীত হয়ে মন ভালো করার চেষ্টা করবে তাই ভালো বন্ধু নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আত্মীয়তার সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা
আল্লাহ তাআলা বলেছেন আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারী অবশ্যই খেয়ানতের অধিকারী। আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ না। আপনার মন ভালো করতে আপনার আত্মীয়রা আপনাকে সাহায্য করতে পারে এবং তাদের কাছ থেকে আপনি উপকৃত হতে পারবেন।
অনেক সময় দেখা যায় আমরা অনেক কষ্টে থাকলে বা টাকা-পয়সার সমস্যা হলে আমরা আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা খুব সহজেই ধার পেয়ে যাই। বা খারাপ সময়ে তারা আমাদের পাশে থাকে আমাদের সাহায্য করে। তাই আমাদের উচিত আত্মীয়তার সম্পর্ক আরো দৃঢ় করা এবং তাদের প্রতি সদাচরণ করা।
হিংসা ও অহংকার মুক্ত হওয়া
আল্লাহ তা’আলা বলেন হিংসা ও অহংকার করা ব্যক্তির অন্তর মোহর মেরে দেন। নিজের মনকে ভালো রাখার জন্য নিজেকে অবশ্যই অহংকার মুক্ত রাখতে হবে এবং আল্লাহ তাআলা বলেছেন অহংকার মুক্ত ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
হিংসা বিদ্বেষ ও অহংকার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য সব সময় নামাজ আদায় করতে হবে এবং সবার সাথে হাসিখুশি ভাবে কথা বলতে হবে। এবং সবার সাথে বিনয়ের সাথে কথা বললে সবাই আপনার কষ্টের সময় আপনার প্রতি সহানুভূতিশীল হবে এবং আপনার কষ্ট ও মন খারাপ লাঘব করার জন্য চেষ্টা করবে।
গরিব-দুখী মানুষকে সাহায্য করা
সাহায্য করা একটি মহৎ গুণ। আর এই গুণী ব্যক্তিদের মন সবসময় ভালো থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন যে সকল লোক দান করেন তাদের মন বিশাল ও সব সময় ফুটফুটে মেজাজে থাকতে পারে, কেননা নেওয়ার হাত থেকে দেওয়ার হাত আল্লাহর কাছে উত্তম।
কখনো গরিব-দুঃখী মানুষ দেখলে তাদেরকে সাহায্য করার মত সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই সাহায্য করবেন কেননা আল্লাহর সৃষ্টি সবার পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। হয়তো আজ আপনার অনেক আছে একদিন আপনার কাছে কিছুই থাকবে না। মানুষের দান করা বস্তু ও টাকা আল্লাহর কাছে অমূল্য, এর প্রতিদান আপনি একদিন পাবেন হোক সেটা মৃত্যুর আগে বা পরে।
গরিব দুঃখী কে দান করতে পারলে নিজের মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায় ইসলাম বলে মনকে ভালো রাখতে হলে অবশ্যই হাত খুলে দান করো তাহলে মন ভালো থাকবে।